ঈদের নামাজে পড়ার নিয়ম এবং প্রস্তুতি
ঈদ। এদেশের মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় একটি মহা-উৎসব। শাওয়ালের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবছর ১৪৪৩ হিজরীর ঈদুল ফিতর ২(দুই) বা ৩(তিন) মে অনুষ্ঠিত হবে আশা করা যাচ্ছে । মুসলিমদের প্রতি বছরে দুটি ঈদ করে থাকেন। যে কারণে অধিকাংশরাই ঈদের নামাজের মূল নিয়ম কানুন ভুলে যান। মুসলিমদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের দিন ঈদের নামাজ পড়ার জন্য কায়িদা (নিয়ম) ও প্রস্তুতির সকল বিষয় বস্তুগুলো নিম্নে তুলে ধরা হল।
ঈদের নামাজ কোথায় আদায় করবেন?
ছাদ ছাড়া (বিহীন) খোলা মাঠে ঈদের নামাজের জামাত আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা (উন্মুক্ত) জায়গায় ঈদের জামাত আদায় করতেন। তবে যদি ঈদের জামাত পড়ার জন্য খোলা জায়গা (স্থান) না থাকে তাহলে মসজিদ বা ছাউনি বিশিষ্ট জায়গাতেও জামাত পড়া যাবে। আবার বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগেও (বৃষ্টি - বন্যা- ইত্যাদি) প্রতিরোধক ছাউনিযুক্ত জায়গায় ঈদের জামাত আদায় করা যাবে।
ঈদের নামাজের নামাজের জন্য শর্ত?
পবিত্র ঈদের নামাজের জন্য জামাত আদায় করা শর্ত। ঈদের নামাযের জন্য উন্মুক্ত স্থান, মসজিদ বা ছাউনিযুক্ত জায়গা অথবা বাসা-বাড়ি; যে জায়গাতেই হোক নিশ্চয় জামাতের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। শুধু আজান এবং ইকামত ব্যতীত জুম'আ নামাজের জন্য যে সকল শর্ত-শারায়েত প্রয়োজ্য ঈদের নামাজের জন্যও ঠিক সে সকল শর্ত শারায়েত প্রযোজ্য।
জামাত আদায় ছাড়া যেমন ঈদের নামাজ আদায় করা জায়েজ হবেনা। তেমনি বাসা বা বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করার ইচ্ছে করলে অবশ্যই জামাতের সাথে তা আদায় করতে হবে।
ঈদের নামাজের কোন আজান এবং ইকামাত নেই। কিন্তু জুমার নামাজের মতই উচু আওয়াজেই কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়।
ঈদের নামাজ শেষ করারপর দুটি খুৎবা প্রদান করতে হবে। যেমনি ভাবে জুমার নামাজের পূর্বে দুটি খুৎবা প্রদান করতে হয়।
জুমার নামাজ এবং ঈদের নামাজের মধ্যে পার্থক্য।
১. ঈদের নামাজের মধ্যে কোন আজান ইকামত নেই।
২. ঈদের নামাজে মধ্যে এক এক করে অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর দিতে হয়। হাদিসের মধ্যে ৬ তাকবীর সহ আরও বেশি তাকবিরের কথা বিভিন্ন রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে ।
৩. ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার পর দুটি খুৎবা প্রদান করতে হবে। আর জুমআর নামাজের বেলায় আগে দুটি খুৎবা দিতে হয়।
ঈদের নামাজের নিয়ত।
ঈদের দু-রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় (৬) তাকবীরের সহিত অত্র ইমামের পিছনে কেবলামুখী হয়ে (আল্লাহর জন্য) আদায় করতেছি- 'আল্লাহু আকবর'।
ঈদের নামাজ আদায়ের(পড়ার) নিয়ম।
১. ঈমামের সহিত তাকবীরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুনো হাত বাঁধা।
২. তাকবিরে তাহরিমার পর হাত বেধে ছানা পড়া-
'সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবী হামদিকা ওয়া তাবার কাসমুকা ওয়াতায়ালা জাদ্দোকা ওয়া-লা ই-লাহা গায়রোকা।
৩. তারপর অতিরিক্ত ৩ টা তাকবির দিবে।
৪. এক তাকবীর থেকে অন্য তাকবিরের মাজে কমপক্ষে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত করা ।
৫. প্রথম এবং দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
৬. ৩য় তাকবীর দিয়ে দুনো হাত তাকবিরে তাহরিমার মত বেঁধে নিতে হবে।
৭. আউজুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়বে।
৮. আলহামদু (ফাতিহা) পড়া।
৯. আলহামদুর সঙ্গে সুরা মিলানো। তারপর অন্যান্য নামাজের মত রুকু এবং সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে ।
দ্বিতীয় রাকাত।
১. প্রথমে বিসমিল্লাহ পড়া।
২. তার পর সুরা ফাতেহা পড়া।
৩. অতপর সুরা মিলানো।
৪. সুরা মিলানোর পর একএক করে অতিরিক্ত ৩(তিন) তাকবীর দিতে হবে।
৫. প্রথম এবং দ্বিতীয় তাকবীরে দুনো হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতে হবে।
৬. তৃতীয় তাকবির দেওয়ারপর দুনো হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৭. অতপর রুকুর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যেতে হবে।
৮. রুকুর পর সেজদা আদায় করতে হবে।
৯. তারপর বৈঠকে বসা এবং তাশাহুদ, দরূদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
১০. নামাজের সালাম শেষ করার পর তাকবির পড়া।
তাকবির হল- >
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
১১. নামাজ শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব দুটি খুৎবা দিবে।
ঈদের জামাত শেষ হওয়ার পর ইমাম খুতবা প্রদান করবে আর মুসল্লিরা খুৎবা মনোযোগের দিয়ে শুনবে। তবে অনেকেই খুৎবা না দেওয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুৎবা না দিলেও ঈদের নামাজ হয়ে যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ঈদের জামাতের জন্য শর্ত
ঈদের নামাজের জন্য জামাত হওয়ার শর্ত এবং - ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি হতে হবে। বিশেষ কারণে বাসা-বাড়িতে পরিবার পরিজনদের নিয়ে ঈদের নামাজের জামাত আদায় করা যাবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ নিয়মে ঈদের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার তাওফিক দান করুন। ঈদের নামাজ আদায়ে যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন আমিন।
No comments